রিশাল নগরীতে চলাচল করছে ৫ হাজারের বেশি অবৈধ থ্রি-হুইলার। এসব যানাবাহনে চলাচলের ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না কোন নিয়ম নীতি। নগরীতে অহরহ প্রবেশ করছে জেলায় চলাচলরত থ্রি -হুইলার। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন, মালিক সংগঠনসহ কতিপয় ব্যক্তি পাচ্ছে মাসোহারা, এমনটি জানিয়েছেন চালকরা। তবে আইন অমান্যকারি থ্রি হুইলারের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান বরিশাল বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি:) মো. আতিকুল আলম।
বরিশাল বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১৯৯৪ টি থ্রি-হুইলার চলাচল করছে। অপরদিকে মেট্রোর আওতায় চলাচল করছে ২৫শ ৩৯টি। কিন্তু তাদের হিসাবে এমন হলেও বাস্তব চিত্র উল্টো।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই এই শহরে চলছে অন্তত ১১ হাজার অবৈধ যানবাহন। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চলাচলের অনুমতি পাওয়া থ্রি হুইলার যানগুলোও নগরীর রাস্তাঘাট দখল করে রেখেছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যাদের দায়িত্ব, সেই ট্রাফিক বিভাগও দায়সারা আচরণ করছে। এসব অবৈধ যানবাহন থেকে প্রতিমাসে আদায় হওয়া অর্ধকোটি টাকার চাঁদা ভাগাভাগি হচ্ছে ট্রাফিকের কতিপয় কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা আর কথিত শ্রমিক নেতাদের মাঝে। নগরীকে যানজটমুক্ত করতে অনুমোদনবিহীন যান বন্ধের দাবি জানিয়েছেন সামাজিক সংগঠনের নেতারা।মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, সিটি কর্পোরেশন থেকে বিগত দুই মেয়রের আমলে ব্যাটারি চালিত ২ হাজার ৬১০টি অটোরিকশার লাইসেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান মেয়র ক্ষমতা গ্রহণের পর ওইসব অটোরিকশার লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ করে দেন। বর্তমান পরিষদ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার লাইসেন্স আর নবায়ন করবে না। সে হিসেবে গত ২ বছর ধরে নগরীতে অবৈধভাবে চলাচল করছে ওই অটোরিকশাগুলো। অবৈধ অটোরিকশার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রতিদিন এই নগরীতে নামছে অনুমোদনবিহীন নতুন নতুন অটোরিকশা। ট্রাফিক বিভাগের হিসেবে বর্তমানে নগরীতে ৫ হাজারের বেশী অবৈধ থ্রি হুইলার ও অটোরিকশা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। নগরীতে চলার জন্য মেট্রোপলিটন পরিবহন কমিটি ৬০০ থ্রি হুইলার (মাহিন্দ্রা) অনুমোদন দিলেও তা এখন বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে নগরীতে চলছে গ্যাসচালিত ১ হাজার ২৫০টি সিএনজি (এলপিজি)। ওদিকে থ্রি হুইলার ট্রাফিক বিভাগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জেলার শত শত মাহিন্দ্রা নগরীতে এসে চলাচল করলেও তাদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
বেশ কয়েকজন থ্রি-হুইলার মালিক বলেন, মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দেয়ায় রাস্তায় গাড়ি চালাতে কোনো সমস্যা হয় না। জেলার গাড়ি মেট্রোতে চলাচল করতে কোন বাধার সম্মুখীন হতে হয় না। কোথাও কোথাও গাড়ি আটকালে মাসিক চাঁদা দেয়া রশিদ দেখালেই ছেড়ে দেয়া হয়।
এদিকে থি-হুইলার থেকে চাঁদা উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে বরিশাল জেলা থ্রি হুইলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মুশফিকুর রহমান দুলাল বলেন, কল্যাণ তহবিলের নামে মাসে ৫০০ টাকা করে উত্তোলন করা হয়। বর্তমানে ৯০০ থ্রি হুইলার থেকে মাসিক এ টাকা নেয়া হচ্ছে। তবে গত কয়েক মাস করোনার জন্য টাকা উত্তোলন বন্ধ ছিল। ২ মাস ধরে আবার টাকা আদায় শুরু হয়েছে। এ টাকা উত্তোলনে শ্রম অধিপ্তরের অনুমতি রয়েছে বলেন তিনি। তবে আদায় হওয়া এ টাকা শ্রমিকদের কি কল্যাণে আসে সে বিষয়ে উত্তর দিতে পারেননি এই মালিক সমিতির এই নেতা।
এদিকে, বরিশাল বিআরটিএ’র পারমিট শাখার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা কাজী শামছুল হক বলেন, এক জেলায় চলাচলরত থ্রি হুইলার মেট্রো এরিয়ায় চলাচল করতে পারবেনা। কারণ সেগুলোকে শুধুমাত্র তার স্থানেই চলাচলের জন্য রুট পারমিট দেয়া হয়েছে। এই আইন অমান্য করা যাবে না।
তিনি বলেন, চলতি বছরের ৮ মাসে ১১টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এর মধ্যে আইন অমান্যকারী ১১১টি অবৈধ থ্রি হুইলারকে মামলা দেয়া হয়েছে।
মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, নিয়মিত অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। অনুমোদনবিহীন অটোরিকশাগুলো বন্ধ করতে সন্মিলিতভাবে অভিযান চালাতে হবে। তিনি আরও বলেন, অবৈধযানের সঙ্গে অনেকেরই সম্পৃক্ততা রয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের অভিযানে তারা অসন্তুষ্ট হয়। ট্রাফিক বিভাগের কোন পুলিশ সদস্য চাঁদাবাজির সাথে যুক্ত থাকলে বিষয়টি আমাকে জানাবেন। অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বরিশাল বিআরটিএ’র সহকারি পরিচালক (ইঞ্জি:) মো. আতিকুল আলম বলেন, জেলায় চলাচলরত থ্রি-হুইলার কোন কারণ ছাড়া নগরীতে প্রবেশ করাটা আইন অমান্যের সামিল। অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান চালানোর পাশাপাশি আটক করে মামলা দেয়া হচ্ছে। অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেন তিনি।
গণমাধ্যম, ঝালকাঠি, দেশজুড়ে, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল, বরিশাল বিভাগ, বিনোদন, ভোলা, মেইন লিড, রাজনীতি, লাইফস্টাইল, শিরোনাম, সাব-লিড