জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে সালিশ বৈঠকে ব্যবসায়ী ও তার পরিবারের লোকেদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময় পরিবারের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে গুরুতর আহত এবং দুই নারীর শ্লিলতা হানির অভিযোগ উঠেছে। গত ১ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে বাবুগঞ্জ উপজেলার ২ নং কেদারপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভুতেরদিয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া হামলার ঘটনায় ব্যবসায়ী মো. আনিছুর রহমান বাদী হয়ে বাবুগঞ্জ থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আসামিরা হলেন- একই গ্রামের মো. বেল্লাল সিকদার (৪২), মো. সোহান চৌকিদার (২৪), মো. ইমরান (২৫), মো. তারেক সিকদার (২০), মো. শাহজাহান চৌকিদার (৫৫) ও মো. আজিজুল সিকদার (৫৮)। আসামিরা একে অপরের আত্মীয়-স্বজন।মামলা সূত্রে জানা গেছে, ‘বাদী মো. আনিছুর রহমান একজন ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসার সুবাদে পরিবারবর্গ নিয়ে চট্টগ্রামে বসবাস করেন। বাড়িতে না থাকার সুবাধে ২০১৮ সাল থেকে মামলার আসামি মো. বেল্লাল সিকদার তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি বর্গা চাষাবাদ করতেন।
পরবর্তীতে ২০১৯ সালে বাদী তার ৪০ শতাংশ পৈত্রিক সম্পত্তি আসামি মো. বেল্লাল সিকদার, একই গ্রামের মো. শিপন সরদার ও মো. নওয়াব আলী প্যাদার নিকট এক লাখ টাকায় বন্ধক রাখেন। এর মধ্যে শিপন সরদার ৪০ হাজার, নওয়াব আলী প্যাদা ৪০ হাজার এবং বেল্লাল সিকদার ২০ হাজার টাকা দেন।পরবর্তীতে বাদী আনিছুর রহমান ২০২০ সালে জনৈক শাহজাহান বকসীর রূপালী ব্যাংক সদর রোড শাখার হিসাব নম্বরে ৪০ হাজার টাকা পাঠালে নজরুল বকসী সেই টাকা শিপনকে দেয়। এছাড়া নওয়াব আলী প্যাদার পাওনা ৪০ হাজার টাকা বাড়িতে এসে পরিশোধ করেন আনিছুর রহমান।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ‘বর্গা চাষি মো. বেল্লাল সিকদারকে তার পাওনা ২০ হাজার টাকা দিতে চাইলে তিনি তা গ্রহণ না করে পুরো এক লাখ টাকা দাবি করে। বাদী বাকি ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন বলে জানালেও প্রতিপক্ষ বেল্লাল তা মানতে নারাজ। বরং বাদীকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল এবং হুমকি প্রদান করে। এমনকি বেল্লাল অবৈধভাবে বাদীর ৪০ শতাংশ পৈত্রিক সম্পত্তি জোরপূর্বক চাষাবাদ করে।
বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানালে তারা গত ১ আগস্ট রাত ৮টার দিকে দক্ষিণ ভুতেরদিয়া গ্রামে বাদী আনিছুর রহমানের বাড়ির উঠানে সালিশ বসান। সালিশের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায় ক্ষিপ্ত হয়ে বেল্লাল সিকদার ও মো. শাহজাহান চৌকিদারসহ অন্য আসামিরা লাঠিসোটা এবং রামদা নিয়ে বাদীর ওপর হামলার চেষ্টা করে। তখন বাদীর বোন মোসা. রেনু বেগম ও দুলুফা বেগম বাদীকে পার্শ্ববর্তী রুহুল আমীনের বসত ঘরে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে দেয়। তখন আসামিরা বাদী আনিছুর রহমানের হাতে থাকা জমির কাগজপত্র ও নগদ ৫৭ হাজার টাকাসহ একটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়।এসময় বাদীর বোন রেনু বেগম ও দুলুফা বেগম বাঁধা দিলে আসামি সোহান চৌধুরী ও শাহজাহান তাদের দুজনকে এলোপাথারী পিটিয়ে গুরুতর আহত এবং তাদের শ্লিলতাহানি ঘটায়। তখন বাদীর ভগ্নিপতি মো. ইউনুছ হাওলাদার তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসলে তাকেও এলোপাথারী পিটিয়ে মাথায় রক্তাক্ত জখম করে। তাকে রক্ষা করতে মামলার সাক্ষী মো. খলিল হাওলাদার এগিয়ে গেলে তাকেও পিটিয়ে আহত করে। একপর্যায় আসামিরা তাদের সহযোগিদের নিয়ে বাদী আনিছুর রহমানকে বসতঘর থেকে টেনে হিচড়ে বের করার চেষ্টা করে।অপরদিকে, হামলায় আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করলে আসামিরা পুরো বাড়ি চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে বাবুগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তবে পুলিশ আশার খবরে দ্রæত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা।এদিকে, বাদী অভিযোগ করে বলেন, মামলা দায়ের করায় আসামিরা আরও ক্ষুব্ধ হয়েছে। তারা আমাকে গ্রামের বাড়িতে যেতে দিচ্ছে না। নানাভাবে খুন-জখমের হুমকি দিচ্ছে। এমনকি পরিবারের লোকেরা যাতে ঘরের বাইরে যেতে না পারে সে জন্য ঘরের বাইরে অজ্ঞাত লোকদিয়ে পাহারা বসিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জীবন শঙ্কায় ভুগছেন বাদী ব্যবসায়ী আনিছুর রহমান। তিনি এই বিষয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন।
আইন-আদালত, গণমাধ্যম, ঝালকাঠি, দেশজুড়ে, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল, বরিশাল বিভাগ, ভোলা, মেইন লিড, শিরোনাম, সাব-লিড