বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তখন বিশেষজ্ঞদের সতর্কবাণী উপেক্ষা করে অফিস-আদালত, দোকান-পাট খুলে দেয়া এবং সড়ক-নৌ-রেলসহ গণপরিবহন চালুর সরকারি ঘোষণাকে জনগণের প্রতি চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় উল্লেখ করে এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।
আগামী রোববার (৩১শে মে) থেকে সরকারি অফিস আদালত ও গণপরিবহন খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তকে ‘সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করেছেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। গণমাধ্যমের কাছে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি আজ বলেছেন, এভাবে সবকিছু খুলে দেবার ফলে করোনার সংক্রমণ আরো বাড়বে।
কামাল হোসেন বলেন, শুরু থেকেই করোনা ভাইরাসকে কোনো গুরুত্বই দেয়া হয়নি। তখন বলা হয়েছে না না এটা কিছু না। তারপর লকডাউন দেয়া হলো। সেটাও ঠিকমতো কার্যকর করা হয়নি। আর এখন যদি সবকিছু খুলে দেয়া হচ্ছে। এর ফলে অবস্থা আরো খারাপ হবে।
ওদিকে, বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মন্তব্য করেছেন, “মৃত্যুদূত করোনাকে আমন্ত্রণ জানাতেই” সরকার অফিস-আদালত-গণপরিবহন চালু করেছে।
শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মানুষের জীবন বাঁচাতে যখন লকডাউন, আইসোলেশন ও ঘরবন্দি থাকার কথা তখনই দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের মতামতকে অগ্রাহ্য করে “মৃত্যুদূত করোনাকে আমন্ত্রণ জানাতে” অফিস-আদালত, গণপরিবহন চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, সরকার অবিবেচকের মতো ছুটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় জাতিকে চরম মাশুল দিতে হবে।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের উর্ধ্বগতিতে দেশবাসী গভীর উদ্বিগ্ন। দেশবাসী প্রতিদিন প্রত্যক্ষ করছে যে, দেশে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এ অবস্থায় সব কিছু খুলে দিয়ে সরকার অবিবেচকের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা রেডিও তেহরানকে জানিয়েছেন, রাজশাহী দু’মাস ধরে করোনা মুক্ত থাকলেও লক-ডাউন শিথিল হবার সুযোগে ঢাকা থেকে লোকজন আসার পর এ এলাকায় সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। এখন অর্থনৈতিক স্বার্থের কথা বিবেচনা করে সব কিছু খুলে দেবার ফলে জনগনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বরং বেড়েই গেল। তিনি এ ব্যাপারে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা ও সরকারের অসংলগ্ন আচরনের সমালোচনা করেন।
এদিকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা সাইফুল হক বলেছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতেই সরকার সবকিছু খুলে দিয়ে নিয়ে জনগনকে চরম বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে। কারণ জনগনের প্রতি তাদের কোন দায়িত্ববোধ নেই।
এর আগে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, দেশে যখন সংক্রমণ ও মৃত্যু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তখন সরকারের এমন সিদ্ধান্ত জনগণের বাঁচা-মরাকে ভাগ্যের ওপর ঠেলে দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকা ও দায়িত্ব এড়ানোর অপচেষ্টা মাত্র।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, যেখানে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন জুনের ১৫ তারিখের পর দেশে করোনা সংক্রমণ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানো এবং তারপর থেকে সংক্রমণ কমার সম্ভাবনা রয়েছে, তখন ৩১ মে থেকে সব খুলে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত জনগণের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা এবং চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় বহন করে।
বিবৃতিতে নেতারা জনগণের জীবনের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে নেয়া সরকারের সব কিছু স্বাভাবিক, সচল করার এমন সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করে বিশেষজ্ঞ মতামতকে গ্রাহ্য করে অন্তত সংক্রমণ চরমে পৌঁছানো পর্যন্ত অফিস, আদালত, দোকান-পাট, গণপরিবহন বন্ধ রাখার দাবি জানান।
শিরোনাম