ঘূির্ণঝড় ‘ইয়াস’এর প্রভাবে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ার দেশের দক্ষিণাঞ্চল সহ উপকুলভাগকে সয়লাব করে দিলেও কাঙ্খিত বৃষ্টি ঝড়াতে না পারায় তাপমাত্রার পারদ এখনো স্বাভাবিকের উপরে। লাগাতার অনাবৃষ্টির পরে ইয়াস-এর প্রভাবে যে পরিমান বৃষ্টি আশা করা হয়েছিল তাতে হতাশ দক্ষিণাঞ্চলবাসী। তবে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ারের লবনাক্ত পানিতে দক্ষিণ উপকুলের বিশাল এলাকা এখনো পানির তলায়। বেড়ি বাঁধ ভেঙে দ্বীপজেলা ভোলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানি বন্দি।
ইয়াস গত ২৬ মে দুপুরে ভারত উপকুলে আঘাত হেনেছে। এর প্রভাবে ২৫ মে থেকে ২৮ মে দুপুর পর্যন্ত বরিশালে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে মাত্র ৩৯.১ মিলিমিটার। এরমধ্যে পুরো ঝড়ের দিন সর্বোচ্চ বৃষ্টি ছিল মাত্র ১৫.৩ মিলিমিটার। আর ঝড়ের আগের দিন বৃষ্টিপাতের পরিমান মাত্র ১১.৩ মিলি। পরদিন বরিশালে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৬.৬ মিলিমিটার এবং সর্বশেষ ২৮ মে মাত্র ৬ মিলি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বরিশাল অঞ্চলে ।এ নিয়ে চলতি মাসে বরিশাল অঞ্চলে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমান দাড়িয়েছে মাত্র ৫৯.৮ মিলিমিটার। অথচ আবহাওয়া বিভাগের হিসেবে চলতি মাসে দক্ষিণাঞ্চলে স্বাভাবিক ১৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের কথা। আর লাগাতার অনাবৃষ্টির ফলে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে তাপমাত্রার পারদ ইয়াস আঘাত হানার আগে পরে স্বাভাবিকের উপরে। গত ২৬ মে দুপুর ১২টার মধ্যে ইয়াস ভারত উপকুলে আছড়ে পড়লেও ২৩ মে বরিশালে মৌসুমের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। শুক্রবারেও বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়সের কাছে। সর্বনি¤œ ছিল ২৭.৬। অথচ আবহাওয়া বিভাগের মতে চলতি মাসে বরিশালে তপমাত্রার পারদ সর্বোচ্চ ৩৩ ডিগ্রী এবং সর্বনি¤œ ২৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস থাকার কথা। রোববার দুপুরে বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
এর আগে গত ২৫ এপ্রিল বরিশালে স্মরনকালের সর্বোচচ্চ তপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৫.৪ ডিগ্রী বেশী। গত কয়েকমাস ধরেই বৃষ্টির অভাবে জনজীবনে অস্বস্তি আর দূর্ভোগ অব্যাহত রয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগের হিসেবে বরিশাল অঞ্চলে গত জানুয়ারীতে স্বাভাবিক ৮.৯ মিলিমিটারের স্থলে কোন বৃষ্টি হয়নি। ফেব্রুয়ারীতে স্বাভাবিক ২৭ মিলিমিটারের স্থলে ১ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝড়েছে। আর মার্চে ৫৭.১ মিলিমিটারের স্থলে মাত্র ০.৩ মিলি বৃষ্টি হয়েছে। এমনকি এপ্রিলেও বরিশাল অঞ্চলে ১৩২.৩ মিলিমিটারের স্থলে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল ৫ মিলিরও কম। আবহাওয়া বিভাগের মতে ফেব্রুয়ারী থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের প্রায় ৯৯% কম।এমনকি চলতি মে মাসে অবহাওয়া বিভাগের দীর্ঘমেয়াদী বুলেটিনে বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিক ১৭৫ মিলিমিটারের স্থলে কিছুটা কম বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হলেও রোববার, ৩০ মে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৫৯.১ মিলিমিটার। এপ্রিলে দক্ষিণাঞ্চলে দুই দফায় কাল বৈশাখী আঘাত হানলেও তার সাথে কোন বৃষ্টি ছিল না। গত ৭ এপ্রিল তৃতীয় কাল বৈশাখীর সাথে মাত্র ১১ মিলির মত বৃষ্টি হয়। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ভর করে বৃষ্টি হয়েছে ৩৯. ১ মিলি।
তবে আবহাওয়া বিভাগ থেকে লঘুচাপ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানের কথা জানিয়ে তার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি দক্ষিনÑপশ্চিম মৌসুমী বায়ু দক্ষিণ-পূর্ব উপকুল পর্যন্ত বিস্তৃত বলে জানান হয়েছে। বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের দু এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়া সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস দেয়া হলেও দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে রোববার দিনভরই ছিল কাঠফাটা রোদ। তাপমাত্রার বাড়াবাড়িও অব্যাহত রয়েছে। রোববারও বরিশালে তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের ১.৬ ডিগ্রী বেশী।