দুপুর বারোটা পার হওয়ার পরও ভোরের আমেজ নগরজুড়ে। সূর্যের দেখা নেই দ্বি-প্রহরেও। অবস্থা দেখে মনে হয় যেন মাত্রই সকাল হয়েছে। চারিদিকে কুয়াশায় ঢেকে আছে বাড়িঘর, গাছপালা। সড়কে রীতিমতো হেডলাইট জ্বালিয়ে ছুটে চলছে যানবাহন। যদিও ৮ জানুয়ারি বুধবার দুপুরে বরিশালের তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শ্বৈত্যপ্রবাহের এই মুহূর্তে কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তবে শক্তিশালী শৈত্যপ্রবাহ ও কনকনে ঠান্ডা আসতে পারে চলতি মাসে। বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক বশির আহমেদ জানিয়েছেন এসব তথ্য। তিনি বলেন, আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে শ্বৈত্যপ্রবাহের আক্রমণ হতে পারে বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায়।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সরকারিভাবে ইতিমধ্যে প্রায় ২০ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা ও রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। তবে এসব কর্মসূচি বেশিরভাগ শহরকেন্দ্রিক। গ্রামের সাধারণ হতদরিদ্র মানুষের কাছে এখন পর্যন্ত পৌঁছেনি এসব শীতবস্ত্র।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সরকারিভাবে ইতিমধ্যে প্রায় ২০ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা ও রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। তবে এসব কর্মসূচি বেশিরভাগ শহরকেন্দ্রিক। গ্রামের সাধারণ হতদরিদ্র মানুষের কাছে এখন পর্যন্ত পৌঁছেনি এসব শীতবস্ত্র।
এদিকে ঘনকুয়াশার কারণে বরিশালের জনজীবন বিপর্যস্ত প্রায়। কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশের কারণে বেলা বুঝতে ঘড়ি নির্ভর হতে হয়েছে। কিন্তু তার আগেই অনেক দেরি হয়ে গেছে অফিসগামী মানুষের। একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, চারিদিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখে লেপের নীচে আরেকটু থাকতে যেয়ে কখন ৯টা বেজে গেছে টের পাইনি। ঘড়িতে চোখ যাওয়ার পর তড়িঘড়ি অফিসে ছুটে এসেছি । তারপরও আধাঘন্টা দেরী হয়েছে আমার আজ।
এই আবহাওয়ায় সবচেয়ে বেশি সমস্যা শ্রমজীবী খেটে-খাওয়া মানুষের। তাদের মধ্যে যাদের জীবিকা শ্রম বিক্রি, তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। সকাল আটটা থেকে নতুন বাজারের মড়কখোলা পুলের উপর বিচ্ছিন্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিজেদের বিক্রি হওয়ার অপেক্ষা ২৫ থেকে ৬০ বয়সের নারী-পুরুষের। কিন্তু বেলা বারোটা পার হলেও কোনো খরিদ্দার আসেনি আজ। নগরীর সড়কে ইজিবাইক ও অটোরিকশার সংখ্যাও গতদিনের তুলনায় অনেক কম। ৮ জানুয়ারী লঞ্চঘাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শীতে যবুথবু ভাসমান মানুষের সূর্যের অপেক্ষা। তবে তাদের গায়ে জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন এর দেয়া শীতবস্ত্র পেচানো দেখা গেছে। বললেন, শীতের কষ্ট নেই এবার, আছে খাবারের কষ্ট। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল পেয়েছেন বলে জানালেন তারা।
বরিশালের জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে প্রাপ্ত ১৮৪৯০ টি কম্বল বরিশালের ১০ উপজেলাসহ নগরীতে বিতরণ করা হয়েছে।
বরিশাল লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনালসহ বেড়িবাঁধ এলাকার আশেপাশের বস্তিতে এই শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি ।
যদিও গ্রামের সাধারণ মানুষ বিশেষ করে কৃষিজীবী মানুষের জন্য এবারের শীতে শীতবস্ত্র পৌঁছেনি বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তাদের দাবী, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছ থেকে ইতিপূর্বে শীতবস্ত্র সংগ্রহ করতেন তারা। বিগত সময়ে শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই এগুলো পেয়েছে। এবারতো আমাদের সে ব্যবস্থাও নেই।
নগরীতে ও আশেপাশের এলাকায় হতদরিদ্র মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করছে ষাটোর্ধ্ব সিটিজেন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনসহ বেশকিছু উন্নয়ন সংস্থার নেতৃবৃন্দ। কিন্তু ইউনিয়নের সব গ্রামে এখনো পৌঁছেনি এসব শীতবস্ত্র। সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়নের মৌলবীরহাট, চন্দ্রমোহন ফেরীঘাট এলাকার অনেকেই শীতবস্ত্র না পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। আবার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল ইউনিয়নের দুধল মাদ্রাসা, গোমা বাজার, চরাদি ইউনিয়নের মকিমাবাদ বাজার এলাকার বাসিন্দারা জানালেন, তাদের কাছে এখনো কোনো শীতবস্ত্র পৌঁছেনি। তবে সেনাকল্যান সংস্থা থেকে খাবারসহ বেশকিছু প্রয়োজনীয় উপকরণ আজ দেয়া হবে বলে নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এসব সাধারণ হতদরিদ্র মানুষের মাঝে ইতিপূর্বেও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে বিগত সময়ে। তখন অনেকেই শীতবস্ত্র পেয়েছেন স্বীকার করেন।
সচেতন নাগরিক মাহবুব খান বলেন, হতদরিদ্র মানুষের অনেকেই এই শীতবস্ত্র সংগ্রহের প্রতিযোগিতা করে। একজন কয়েকবার করে পায়, আবার কেউ পায়না। যারা কয়েকবার পায় বা সংগ্রহ করে তারা এগুলো ব্যবহার না করে বিক্রি করে দেয়। যে কারণে প্রতিবছর সরকারিভাবে অসংখ্য শীতবস্ত্র বিতরণ করার পরও চাহিদা শেষ হয়না। এজন্য পরিকল্পনা প্রয়োজন। হতদরিদ্র মানুষের তালিকা তৈরি করে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে হবে। শীতবস্ত্র হিসেবে শুধু কম্বল নয়, পাশাপাশি সোয়েটার, জ্যাকেটও দেয়া উচিত। চলতি বছর যারা পাবেন তারা আর আগামী দুইবছর পাবেন না, এরকম নিয়ম করে ঘোষণা দিয়ে দিতে হবে। তাহলে চাহিদা অনুযায়ী শীতবস্ত্র সকলের হাতেই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
তার এই বক্তব্যে সহমত পোষণ করেন বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক। তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা ইতিমধ্যেই নোটিশ করেছি। যে কারণে আমরা শীতবস্ত্র হিসেবে শুধু কম্বল নয়, পাশাপাশি জ্যাকেট ও সোয়েটার বিতরণ করছি। আমাদের নেতা তারেক রহমানের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সমস্যা চিহ্নিত করে তা দূর করার। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি