তৈরি হয়েছে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা
আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দুই বছর আগেও নদী ভাঙ্গনের আতংকে রাত জেগে পাহারা দিতেন সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ও চরকাউয়ার ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। আজ তারা নিরাপদ রাত্রি যাপন করছেন সেখানে। দূর হয়েছে ভাঙন আতঙ্ক। শুধু তাই নয়, নদী তীরবর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অসংখ্য দোকানপাট এবং ৮/১০ টি আধুনিক চাইনিজ ও বাংলা খাবারের রেস্তোরা। এসব এলাকায় প্রতিদিন ভিড় করছে শত শত মানুষ। নিরিবিলি পরিবেশে মুক্ত হাওয়া এবং নিরাপদ স্বাচ্ছন্দ চলাচলের জন্য নদীর পাড় এখন দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখরিত। বদলে গেছে স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা। দর্শনার্থীদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় বানিজ্যিক স্পট হিসেবে ইতিমধ্যেই পরিচিতি পেয়েছে কীর্তনখোলা নদীর চরবাড়ীয়ার ভাঙ্গা এলাকা। এলাকাবাসী ছাড়াও দূর-দূরান্তের ভ্রমন পিপাসু মানুষেরা ভিড় করছেন নদীর পাড়ে। অনেক রাত পর্যন্ত জমজমাট নদী তীরবর্তী বেড়িবাঁধ এলাকা। জোৎস্নার আলো উপভোগ করতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নির্ভয়ে অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেন তারা। উপভোগ করেন নদীর নির্মল হাওয়া। সব মিলিয়ে বরিশাল সদর উপজেলার কীর্তনখোলা নদীর চরকাউয়া ও চরবাড়িয়া বেড়িবাধ এখন নতুন স্বপ্ন তৈরি করছে সাধারন মানুষের মনে। আর এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল সদর আসনের এমপি কর্ণেল অব: জাহিদ ফারুক শামীমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। নদীর দুইপাড়ে ভাঙ্গন রোধে ব্লক বসিয়ে তৈরি হয়েছে চমৎকার বেড়িবাধ। একসময় যেখানে ছিলো ভাঙ্গন আতংক। এখন সেখানে তৈরি হয়েছে পর্যটন আমেজ। বেড়িবাধ দেওয়ার ফলে জমির দাম বেড়েছে দ্বিগুন।এদিকে সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বেশিরভাগ সড়কও এখন পিচঢালা পথ। তাই বেড়েছে রিকশা অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল। খুব সহজেই নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে তারা ছুটে আসেন বেড়িবাঁধে। অথচ দু বছর আগেও এগুলো ছিলো হাঁটু কাঁদা পানিতে ব্যবহার অনুপযোগী। এই বেড়িবাঁধেরই চরকাউয়া অংশের একজন ভ্রমণকারী রফিকুল ইসলাম জানালেন, দীর্ঘ ৩০ বছর সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের পূর্ব কর্ণকাঠী থেকে চরকরঞ্জী হাইস্কুলে যাওয়ার সরাসরি কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলো না। ছেলেমেয়েদের সাঁতার কেটে পার হওয়ার ভিডিও দেখে নিজেই ছুটে যান সংসদ সদস্য পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল অব. জাহিদ ফারুক শামীম। স্বচক্ষে পরিস্থিতি দেখে সাথে সাথে ঐ এলাকার সড়ক ও ব্রীজ নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগ নামেই যে কর্ণকাঠীর মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিতেন, তাদের কাছে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এখন এক বিশ্বাসের নাম। পূর্ব কর্ণকাঠী গ্রামের আরো কয়েকজন বাসিন্দা মূসা খান, আমজাদ হোসেন সহ মেম্বার মজিবর রহমান লিচু বললেন, এই এলাকার প্রধান সমস্যাই ছিলো ব্রীজ আর সড়ক। জাহিদ ফারুক শামীম এমপি এসে নিজে সব সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছেন এবং প্রথমেই পাঁচটি ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। সড়কের কাজও এখন শুধু টেন্ডার হবার অপেক্ষা।
এসময় আরেকজন ভ্রমণকারী ও কর্ণকাঠী গ্রামের বাসিন্দা অভিযোগ তুলে বলেন, স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগ নেতারা তার কাজের বিরোধিতা করে হয়রানি করছে। তারা ঠিকাদার বিএনপির লোক দাবি করে মামলা দিয়ে দুটি ব্রীজ নির্মাণের কাজে বিঘœ ঘটাচ্ছে বলে জানান তিনি।
প্রতিদিনি বিকেল পাঁচটার পর চরবাড়িয়া বেড়িবাঁধ এলাকায় মানুষের উপচে পরা ভিড় দেখে মুগ্ধ এলাকাবাসী। ৬০-৮০টি বসার স্থানসহ চমৎকার আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। বছর দুয়েক আগেও যা ছিলো আতঙ্ক, সেখানে আজ বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে চরবাড়িয়া এলাকার ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার নদী রক্ষা বাঁধ এলাকা। যার ব্যয় ধার্য্য হয়েছিল ৩৮০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বলে জানা গেছে।
বরিশালের বেলতলা খেয়াঘাট থেকে চরবাড়িয়ার ভাঙার হাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধে এখনো বেশকিছু কাজ বাকী আছে। এই কাজ শেষ হলেই বেড়িবাঁধ এলাকা জুড়ে তৈরি হবে পর্যটন সম্ভাবনা। গড়ে উঠেছে বেশকিছু হোটেল রেষ্টুরেন্টও। এলাকাবাসীর দাবী, এই বেড়িবাঁধ লামচরি আরজ আলী মাতুব্বর এর বাড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত হলে পর্যটকদের ভিড় আরো বাড়বে।
এদিকে একইচিত্র চরকাউয়া বেড়িবাঁধে। এখানে ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল অবঃ জাহিদ ফারুক নিজেই। তিনি এই এলাকায়ও পর্যটন উপযোগী বিনোদন কেন্দ্র গড়ে ওঠার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, চরবাড়িয়ার বেড়িবাঁধে কিছু কাজ এখনো বাকী আছে। সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য দুটি সড়ক ভাঙা, বাঁধের শেষ মাথায় ২০০ মিটার কাজ ও একটি সংযোগ সেতুর প্রয়োজন। যা আগে জানলে অনেক আগেই তৈরি হয়ে যেত। নদীর পশ্চিম পাশে চরবাড়ীয়া অংশে ৫.৬ কিলোমিটার এবং পূর্ব পাশে ৩ কিলোমিটার করে মোট ৬ কিলোমিটার ব্লকের কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, যেসব এলাকায় সড়ক ভাঙ্গা ও সংযোগ সেতু নেই সেখানে সড়ক ও সেতু তৈরির নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি। চলতি মাসের শেষে বা আগামী মাসের প্রথমে চরকাউয়া এলাকায় পুনরায় বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হবে। ঐ সময় চরবাড়িয়ার যে অংশে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত রয়েছে তা মেরামত এবং সংযোগ সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানান পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী। চরকাউয়া এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, কীর্তনখোলা নদীর চরকাউয়া অংশে বেরিবাধ নির্মাণের জন্য সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক শামীমকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।