বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর এর বক্তব্যের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে বরিশাল আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার ঝড় উঠছে ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সবাই বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির দাবী জানিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। গত ২৮ নভেম্বর বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুকের বিরোধীতা করে বক্তব্য দেন। তিনি গত ১২ জুনের বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে শান্তি সমাবেশের আড়ালে নগরে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহর নেতৃত্বে শোডাউন করেন। ওই সমাবেশে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমাদের পাকা ফসল কেটে আর একজনে ঘরে তুলবে, তা হতে দেওয়া হবে না। আমরা কোনো বহিরাগতকে সুযোগ দেব না। সিটি নির্বাচনে আমাদের গাঁধা বানিয়েছে। ওই নির্বাচনের মতো আর খালি মাঠে গোল দিতে দেব না। এবার খেলা হবে। জনগণ ভোটকেন্দ্রে যাবে। প্রশাসন ব্যবহার করে বাক্স ভরবেন, সেই সুযোগ আর দেওয়া হবে না।’ ওই ঘটনার পর ৩০ নভেম্বর বৃহস্পতি ও ১ ডিসেম্বর শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তোলেন নেতাকর্মীদের একাংশ। পরে ২ ডিসেম্বর শনিবার বরিশালের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুক ও নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত অনুসারী নেতাকর্মীরা। মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আফজালুল করিম এর সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন আইনজীবী কেবিএস আহমেদ কবীর, লস্কর নুরুল হক, কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন লিখেছেন, ‘জাহাঙ্গীর সাহেব আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে সংগঠনবিরোধী বক্তব্য দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁর বিচার চাই।’
শনিবারের সমাবেশে এসেও একই বক্তব্য রাখেন তারা। এসময় ২০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব একেএম জাহাঙ্গীর এর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন ‘উনি জামায়াতের দালাল, তাকে অবিলম্বে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হোক। মহানগর কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ দাবী করে নতুন কমিটি গঠনের দাবী করেন বিপ্লবসহ শতাধিক নেতাকর্মী।
এসময় খোকন সেরনিয়াবাত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির উপপ্রধান লস্কর নুরুল হক বলেন, ‘সভাপতি গঠনতন্ত্রবিরোধী কথা বলে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। চার বছরের মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটি বাতিল করতে হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন বলেন, ‘গত ১২ জুনের সিটি নির্বাচন হয়েছিল ইভিএম পদ্ধতিতে। সেই নির্বাচন সম্পর্কে নগর সভাপতি জাহাঙ্গীর প্রশ্ন তুলেছেন। জাতীয় নির্বাচনেও প্রশাসন দিয়ে ব্যালট ভরার কথা বলে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
মামুন বলেন, জাহাঙ্গীর নিজের ছেলের বিয়ের টাকা জেলা পরিষদ থেকে ব্যয় করেছেন। তিনি বিএম কলেজে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাকশাল গঠনের কথা বলেছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের এই কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ বলে জানান খান মামুন।
বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের এই সমাবেশ শেষে সভাপতি জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারের দাবিতে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আফজালুল করিম বলেন, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা একেএম জাহাঙ্গীর যখন ২০১৮ ও গত ১২ জুনের নির্বাচন নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন, তখন শুধু বরিশাল নয়, বাংলাদেশের সবখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তিনি এই কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ দাবী করে অবিলম্বে নতুন কমিটি দেওয়ার দাবী করেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, তিনি শান্তি সমাবেশে যা বলেছেন সঠিক বলেছেন। তাঁর বক্তব্য শুনলেই বোঝা যাবে তিনি কী বলতে চেয়েছেন। এটি নিয়ে যারা তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চান তারা কারা প্রশ্ন তোলেন একেএম জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, সারাজীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছি, দলের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো কথা আমি কি করে বলতে পারি। আমি যা বোঝাতে চেয়েছি, তা তারা ঠিকই বুঝেছেন এবং আমার বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন বলে জানান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি।
তিনি দাবি করেন, বর্তমান কমিটি মোটেও মেয়াদোত্তীর্ণ নয়। ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর মহানগরের সম্মেলন হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন হয়েছে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি। কৌশলগত কারণে তাঁরা ৩০টি ওয়ার্ড কমিটি পূর্ণাঙ্গ করেননি।
এদিকে বরিশালের মহানগর আওয়ামী লীগের বক্তব্যকে ঘীরে বিভাগের ছয় জেলায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ইতিপূর্বেই বরিশাল বিভাগের ২১ আসনের ২০টিতেই নৌকা প্রার্থীর বিরোধীতা করে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা প্রার্থী হয়েছেন। তারা সবাই নৌকার প্রার্থী ঠেকাতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।
এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আফজালুল করিম বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড নৌকার প্রার্থী ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী নেই সেখানে ডামি প্রার্থী হতে বলেছেন। এ ডামি প্রার্থী দলীয় পদ পদবীর কেউ হতে পারবেনা তাও পরিষ্কার বলা হয়েছে। যারা এই নির্দেশনা মানবেন না তারাতো প্রধানমন্ত্রীর বিরোধিতা করলেন।