মাস্টার প্লানিং বন্ধ ২০২০ সাল থেকে। বারবার পরিবর্তন হয়েছে নগরীর বিধিমালা। যে কারণে নতুন বাড়ি তৈরির পরিকল্পনার (প্ল্যান) নকশা অনুমোদন আটকে থাকছে মাসের পর মাস। ইতিপূর্বে এনেক্স ভবনে কর্মকালেই ১২ শতের বেশি প্লান আটকে ছিলো বলে জানিয়েছিলেন তদানিন্তন প্লানিং বিভাগের প্রকৌশলী সানজিদ হোসেন। সে সময় সানজিদ স্পষ্ট বলেছিলেন, মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এর নির্দেশ ছাড়া তাদের কিছু করার ক্ষমতা নেই। এদিকে ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর প্রকৌশলী সানজিদ হোসেনসহ কয়েকজনের চাকুরী ঝুঁকি সৃষ্টি হলেও বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে ঐ সময়ের বিতর্কিত কর্মকর্তারা। নতুন প্রশাসক বিভাগীয় কমিশনার এর নেতৃত্বে তাদের নিয়েই খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে বরিশাল সিটি করপোরেশন। বাড়ির প্লানি আটকে থাকায় সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদ জানিয়েছে ইমারত নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। আবার নগরীর সড়কের বেহাল দশা নিয়ে বেখেয়ালি আচরণ করছে বিসিসি প্রশাসন। বেশকিছু সড়ক ও ফুটপাতের ঢাকনা চুরি হয়ে ঝুকিপূর্ণ হয়ে পরে আছে গত প্রায় ছয়মাস ধরে। বাংলা বাজার থেকে আমতলা মোড়, কলেজ রো, নবগ্রাম রোড, চৌমাথা, মেডিকেলের বিপরীতে ১১ ও ১২ নং ওয়ার্ডসহ ত্রিশ গোডাউন এলাকার সড়কের চিত্র তুলে ধরেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতকিছুর পরেও কিছুই আসে যায়না সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের বলে অভিযোগ নগরবাসীর।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, মাসের পর মাস গেলেও বাড়ির নকশা পাস না হওয়ায় ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারছেন না তারা। আবার অবৈধ যানবাহনের পাশাপাশি সড়কের খানাখন্দের কারণে নগরীতে চলাচল খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে একাধিক অভিযোগ তাদের। সবচেয়ে বেশি সমস্যা বাড়ির নকশা পাশ না হওয়া নিয়ে। এর ফলে নির্মাণসামগ্রীর ঊর্ধ্বগতির বাজারে আর্থিক লোকসান হচ্ছে বেশিরভাগ বাড়ি মালিকদের। আবার নকশা আটকে থাকার কারণে নগর ভবন কর্তৃপক্ষও রাজস্ব হারাচ্ছে বলে স্বীকার করে প্রশাসন। ভবনের নকশা তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, গত প্রায় তিন বছর ধরে সিটি করপোরেশন থেকে নানা অজুহাতে নকশা পাস করাতে পারছেন না বাড়ির মালিকরা। তারা বলছেন, সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ মেয়রের চেয়ারে বসার পর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ চালু করেন। তবে এর আগে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ১৯৯৬ অনুসারে কাজ করতেন প্রকৌশলী ও বাড়ির মালিকরা। এদিকে ২০০৮ বিধিমালার কারণে ১৯৯৬ সালের বিধিমালা অনুসরণকারীরা বিপাকে পড়ে যান।
এমনকি ২০০৮ বিধিমালা কার্যকর নিয়ে নাগরিকদের মাঝেও একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে নকশা জমা দেওয়ার হার কমে যায়। এরপর সাদিকের চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত মেয়রের চেয়ারে বসার পর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ বাদ দিয়ে ১৯৯৬ এর বিধিমালা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন। আর এভাবে বারবার বিধি পাল্টানোর কারণে বিপাকে পড়ছেন বাড়ির মালিকেরা। ভুক্তভোগী শহীদুল নামে এক বাড়ির মালিকের ছেলে বলেন, ২০০৮ এর বিধিমালা মেনে বাড়ির নকশার কাজ করে অনুমোদনের জন্য জমা দিয়েছিলাম। অজ্ঞাত কারণে তা আটকে ছিলো। পরবর্তী সময়ে সর্বশেষ মেয়রের সময় ১৯৯৬ বিধিমালা কার্যকর করা হয়। এতে করে আবার নকশা আটকে যায়। এখনো সেই নকশা আটকে আছে।
তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত বাবা কিংবা আমি নগর ভবনে যাচ্ছি। কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই। রাগ হয়ে সংশ্লিষ্ট শাখার কাউকে কিছু বলতেও পারি না, তাহলে ভুল ধরে ধরে শেষ করে দেবে। অথবা নকশা পেয়ে যখন কাজ শুরু করব, তখনও নানাভাবে হয়রানি করবে। তার চেয়ে ভালো অপেক্ষায় থাকা। এদিকে বাংলা বাজার সড়কের খানাখন্দের কারণে ইজিবাইক উল্টে মারাত্মক আহত কালু খা সড়কের বাসিন্দা নুরুল হক বললেন, এই সড়কতো পাঁচ বছর মেয়াদি চুক্তির। তাহলে বছর না যেতেই এরকম খানাখন্দ কি করে হলো? নগরীর ১০ ও ১৮ নং ওয়ার্ডের সড়ক ও ফুটপাতের স্লাব চুরি হওয়ায় ঐ সব সড়কে যানবাহন চলাচল ঝুকিপূর্ণ এখন। নবগ্রাম রোডের ফুটপাতে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন ড্রেনে পরে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এ নিয়ে একাধিক অভিযোগ জানিয়েছেন নগর ভবনে। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি বলে জানান ব্যাবসায়ীরা। নগরীর ২৩ নং ওয়ার্ড ইসলাম পাড়ার বাসিন্দা তানিয়া নামে এক নারী বলেন, তিন বছর ধরে আধাআধি সড়কের কারণে এই এলাকার বাড়ি মালিকরা ভাড়াটিয়া পাচ্ছে না। আবার নির্মাধীন বাড়ির মালামাল আনানেওয়া অসম্ভব আমাদের। এখানে বেশকিছু বাড়ির মালিক তাদের নকশা অনুমোদনের জন্য সিটি করপোরেশনের দুয়ারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গত দু-তিন বছর ধরে। সিটি করপোরেশনের প্লানিং শাখায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের ঘোরাঘুরি চোখে পড়ে।
তারা বলেন, এখানে দক্ষ কোনো কর্মকর্তা নেই গত প্রায় ছয় মাস ধরে। নিয়মানুযায়ী নকশা জমা দিলেও কবে নাগাদ পাবেন, তাও কেউ বলতে পারে না। আর সংশ্লিষ্ট শাখার স্টাফরা বলছেন, কর্তৃপক্ষ নিয়ম অনুযায়ী দাখিল করা নকশাগুলো যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেয়। এক্ষেত্রে একটি বোর্ডও রয়েছে। তবে ১৯৯৬-এর স্থাপনা বিধিমালা বাস্তবায়ন ও অনুমোদনে দুটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হাওলাদার বলেন, একটি বাড়ির জন্য পানির লাইন ও হোল্ডিংয়ের প্রয়োজন। আর এ দুটি খাত থেকেই আমাদের রাজস্ব আসে। ফলে নকশা পাসের সঙ্গে যেহেতু এ দুটি বিষয় সম্পৃক্ত, তাই গত কয়েকমাস ধরে এর প্রভাব রাজস্ব খাতেও পড়ছে। আর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারী জানান, সড়কের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। ধীরে ধীরে সবগুলো সড়কের কাজই শেষ করা হবে।
আর বাড়ির প্লানিং নিয়ে যাচাই-বাছাই শেষে যেসব নকশা নিয়মের মধ্যে পাওয়া যাবে, সেগুলো পাস করে দেওয়া হবে। আর এ কাজ অতি দ্রুতই করা হবে। সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এক থেকে ছয়তলা ভবনের নকশার জন্য আবেদন জমা আছে ৬৮০টি। আর সাততলা থেকে এর বেশি উচ্চতার ভবনের নকশার অনুমোদনের আবেদন জমা পড়েছে ৩৭টি। তবে ভবন নির্মাণের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, আটকে থাকা নকশার সংখ্যা হাজারের বেশি।
গণমাধ্যম, ঝালকাঠি, দেশজুড়ে, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরিশাল, বরিশাল বিভাগ, বিনোদন, মন্তব্য প্রতিবেদন, মেইন লিড, লাইভ ভিডিও, শিরোনাম, সাব-লিড