করোনায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের যেতে হচ্ছে না কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বাড়িতে বসে অলস সময় পার করছে অনেক শিক্ষার্থী। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের করোনা মহামারিতে পড়াশোনা একেবারেই না হওয়ায় বেড়েছে বাল্যবিয়ে। দারিদ্র্যপীড়িত উত্তরের জনপদ কুড়িগ্রামে বেশির ভাগ দরিদ্র শ্রেণির মানুষজন কন্যা সন্তানকে দিচ্ছেন বাল্যবিয়ে। কুসংস্কারের কারণে অল্প বয়সে বিয়ে দিচ্ছেন অনেক বাবা-মা।
জেলা সদরের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রী বাল্যবিয়ে হয়ে এখন স্বামীর সংসার করছেন বলে জানা যায়। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের বাগবান্ধা গ্রামে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী চৌদ্দ বছরের কিশোরী রূপালী খাতুন এখন স্বামীর ঘরে রান্নার কাজ করছে।রুপালী মাত্র ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে এখন বই-খাতা-কলম ছেড়ে মাটির চুলোয় খড়ির আগুনে কড়াইতে মাছ ভাজতে দেখা যায়। যে সময়ে নেবে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রস্তুতি সেখানে সে রান্না নিয়ে ব্যস্ত। তার স্বামী মঞ্জু মিয়া রৌমারী থেকে ঢাকাগামী বাসের হেলপার। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে রুপালীর বিয়ে হয় প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ করে। বাবা দিনমজুর হেলাল উদ্দিন জানান, করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে এবং হাতে কাজ না থাকায় অভাব অনটনের সংসারে রুপালীকে বিয়ে দিতে হয়।
রৌমারী উপজেলার নদী বেষ্টিত চরাঞ্চলে তুলনামূলকভাবে বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি। একই অবস্থা রুপালীর মতো রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী নুরি আক্তারের। এরকম রুপালী, মমতাজ, ফাতেমা, নুড়িসহ আরো অনেক শিক্ষার্থীকে করোনাকালীন বাল্যবিয়ের শিকার হতে হয়েছে।
বিশেষ করে বাল্যবিয়ের ঘটনা জেলার চরাঞ্চল গুলোতে বেশি ঘটছে। ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর ছোট-বড় প্রায় ৫ শতাধিক দ্বীপচরের মানুষের শিক্ষার অভাবসহ অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। তাই অনেকেই মেয়ে একটু বড় হলেই বিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। প্রাথমিকের গন্ডি পার হতে না হতেই বিয়ে হয়ে যায়।
রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি এলাকার মজিবর রহমান বলেন, চরের মধ্যে বাহে বেটির কোন নিরাপত্তা নাই। আর নেকাপড়া করিয়া কি করবে? করোনার কারণে আগের মতন আর কাম কাজ নাই। খাওয়াইয়া বেশি। ছোটতে বিয়া দিলে যৌতুক কম নাগে তাই বেটিক বিয়া দিছি।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার তপন কুমার সাহা জানান, প্লাান ইন্টার ন্যাশনালের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় আমরা বিডিএফজি (বিল্ডিং বেটার ফিউচার ফর গার্লস) নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছি। যেখানে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাল্যবিয়ের হার কমানোই একমাত্র লক্ষ্য।
মাঠ পর্যায়ের তথ্য উপাত্ত নিয়ে এ অফিসটির সূত্র জানায়, গত ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত জেলায় ২১ হাজার ১০০টি বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে নিবন্ধিত বিয়ের সংখ্যা ১৭ হাজার ৯৮৪টি এবং অনিবন্ধিত বিয়ের সংখ্যা ৩ হাজার ১১১টি। জেলার ৯টি উপজেলায় বাল্যবিয়ে সংগঠিত হয়েছে ২ হাজার ৯৫৩টি। এ সময়ে সামাজিক ও প্রশাসনের উদ্যোগে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে এক হাজার ১২০টি। সদর উপজেলায় ৭০২টি, রাজারহাটে ৭৩টি, উলিপুর ২৫৯টি, চিলমারীতে ১৪০টি, রৌমারীতে ৮৪টি, রাজিবপুরে ৪৯টি, নাগেশ্বরীতে ১ হাজার ১২৮টি, ফুলবাড়িতে ২৯১টি, ভূরুঙ্গামারীতে ২২৭টি বাল্য বিয়ে সংগঠিত হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম জানান, এত কম বয়সে ৪র্থ- ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীর বিয়ে হওয়া অত্যন্ত কষ্টের। তবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এটি অবশ্যই প্রতিহত করার জন্য আমরা সচেষ্ট রয়েছি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বাল্যবিয়ের কথা স্বীকার করে জানান, করোনাকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এটি প্রকট আকার ধারণ করেছে। তবে আমরা এ ধরণের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসাররাসহ প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটগণ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। আমি সকলকে সচেতন হওয়ার আহবান জানাই।
আইন-আদালত, গণমাধ্যম, ঝালকাঠি, দেশজুড়ে, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল, বরিশাল বিভাগ, ভোলা, মেইন লিড, শিক্ষা, শিরোনাম, সাব-লিড, স্বাস্থ্য