বর্ষা শুরুর আগেই মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ বরিশাল নগরবাসী। ঘরে-বাইরে সমানতালে মশার উপদ্রব। প্রতিদিনই ‘মশার যন্ত্রণার’ অভিযোগ নিয়ে নগর ভবনে যাচ্ছেন বাসিন্দারা। তারা বলছেন, এলাকায় ঠিকভাবে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। এমনকি ওষুধ ছিটানোর দায়িত্বে থাকা স্প্রেম্যানদেরও দেখা যায় না। কিছু কিছু স্থানে নামমাত্র যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে, তাতে মশা মরছে না।
অপরদিকে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) কর্মকর্তাদের দাবি, প্রতি ওয়ার্ডে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, খাল, নালা-নর্দমা মশায় গিজগিজ করছে। শুধু সন্ধ্যায় বা রাতে নয়, দিনেও বাসা-বাড়িতে মশার উৎপাত। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কার্যক্রম এবং ওষুধ ছিটানো নিয়ে অনেকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
বিসিসি সূত্রে জানা গেছে, ৫৮ বর্গকিলোমিটারের বরিশাল সিটিতে প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষের বাস। ৩০টি ওয়ার্ডে বিভক্ত এ সিটির মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন মাত্র ৪০জন কর্মচারী। আধুনিক সরঞ্জাম বলতে রয়েছে ১২টি ফগার মেশিন। অভিযোগ রয়েছে যারা এসব পরিচালনা করছেন, তাদের নেই কোনো প্রশিক্ষণ। ফলে তারা জানেন না কোথায় কোন প্রজাতির মশা রয়েছে। কোন মশার জন্য কী ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। আর কীটনাশক প্রয়োগের মাত্রার সর্বোচ্চ ও সর্বনিন্ম সীমা কতটুকু।
নগরীর ২৫ নং ওয়ার্ড রুপাতলী বসুন্ধরা হাউজিংয়ের বাসিন্দা জাহিদ হোসেন জানান, ‘সারা বছরই মশার যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি এতটাই বেড়েছে যে মশার কামড়ে টেকা দায়। এলাকায় মশার ওষুধ ছিটাতে স্প্রেম্যানদের দেখা যায় না। নালা-নর্দমায় জমা পানিতে মশার বংশবৃদ্ধি আব্যাহত আছে।’ সাগরদী এলাকার বাসিন্দা রুবেল হোসেন বলেন, ‘এখন ঘরে-বাইরে সমান উপদ্রব মশার। বিকাল গড়ালেই মশার যন্ত্রণায় টিকা দায়। এমনকি দিনেও মশার উপদ্রব দেখা যাচ্ছে।’ মশার যন্ত্রনা থেকে রক্ষা পেতে নগর ভবনে অভিযোগ করা হয়েছে। নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে মশার উপদ্রব অনেক বেশি বলে জানান সেখানকার বাসিন্দারা।
রূপতলী হাউজিং এলাকার ২৫ নম্বর রোডের ১ লেনের বাসিন্দা নিরব বলেন, ছয়তলায় একটি ফ্লাটে স্ত্রী ও দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকি। মশার উৎপাত এতই বেশি যে সন্ধ্যার পর ছেলে মেয়েকে মশারির মধ্যে রাখতে হয়। মশার জ্বালায় বাসায় কোথাও একটানা বসে থাকা যায় না। মশার কামড়ে স্বাভাবিক কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু মশা মারতে করপোরেশনের লোকজনের দেখা মিলে না। তিনি বলেন, নগরীর অন্য এলাকার তুলনায় এটি নিন্মাঞ্চল। সারা বছরই এ ওয়ার্ডে পানি জমে থাকে। এর মধ্যে নতুন নতুন বহুতল ভবন গড়ে উঠছে।
এছাড়া রূপতলী হাউজিং এলাকার পাশেই বাস টার্মিনাল। যার কারণে টায়ার ও পরিত্যক্ত টিউব যন্ত্রপাতি পরিত্যাক্ত অবস্থায় প্রায় পড়ে থাকে। টার্মিনালের রাস্তার দুই পাশের ড্রেন ও নালায় অসংখ্য প্লাস্টিকের কাপ, পানির বোতল, কর্কশিটের বাক্স, ডাবের খোসা, ঠোঙা জমে আছে। এখানে প্রচুর মশা জন্মায়। কিন্তু এ এলাকায় সিটি করপোরেশন মশার ওষুধ ছিটায় না। নগরীর ১৯ নং ওয়ার্ডের নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা পলাশ জানান, সন্ধ্যার পর বাইরে বের হলে মশা যেভাবে ঘিরে ধরে মনে হয় উড়িয়ে নিয়ে যাবে। দিনেও মশা কামড়ায়। ২৪ ঘণ্টা কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়।
নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের দরগাহ বাড়ি রোডের বাসিন্দা মাইদুল জানান, বিকেল হলেই মশার উৎপাত শুরু হয়। সন্ধ্যা নাগাদ তা চরমে পৌঁছে। সন্ধ্যার পর কয়েল বা স্প্রে ছাড়া ঘরে থাকা যায় না। এরপরও মশক নিধনের কোনো কার্যক্রম দেখা যায় না। তিনি আরও বলেন, সামনে বর্ষা মৌসুম। বৃষ্টি হলে এডিস মশা বাড়বে। আবার গরমে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলেও মশা বাড়বে। তাতে ডেঙ্গুর প্রকোপও বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে। সাধারণত জুন-সেপ্টেম্বর সময়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি। এ সময়কে ডেঙ্গুর মৌসুম বলা হয়। তবে সিটি করপোরেশন যে ওষুধ ছিটাচ্ছে, তা মশা মারতে কতটা কার্যকর তা পরীক্ষা করে দেখা দরকার।
নগরীর ১১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি শাহ্ সাজেদা বলেন, নগরীর সবখানেই মশার উৎপাত। সামনে বর্ষার সিজেন। এ সময়টা আরো মশা বাড়বে। সিটি করপোরেশন মশানিধনে স্প্রে দিয়ে যাচ্ছে। সনাক সভাপতি বলেন, সব দায়ভার বিসিসি উপর দিলেই হবে না, আমাদের সচেতন হতে হবে। নিজেদের বাড়ী আশপাশ এবং বাজারগুলো পরিস্কার -পরিচ্ছনতা রাখতে হবে, এতে মশার উপদ্রবটা অনেকটা কমে আসতে পারে বলেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে বিসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মঞ্জুরুল ইমাম শুভ্র মুঠোফোনে ফোন দেয়া হলে রিসিভ না করায় জানা সম্ভব হয়নি। তবে পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা (ভেটেনারি সার্জন) ডা. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে মশা নিধনের কার্যক্রম চলমান আছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে স্প্রেম্যান প্রতিদিন ওষুধ ছিটাচ্ছে। এছাড়া মাসে ২ বার করে ফগার মেশিন ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন, অনেক এলাকায় নালা-নর্দমায় জমা পানিতে মশার বংশবৃদ্ধি হয়। বসবাসকারি সাধারন মানুষ নিজেদের আশপাশের জমি ও ড্রেন পরিস্কার রাখলে মশার উপদ্রব থাকবে না।
পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা বলেন, মশার কবল থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করতে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করা হয়েছে। বিশেষ অভিযানে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে গতি আসবে। এ ব্যাপারে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক হোসেন বলেন, মশা নিধনে দ্রত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি মশার উৎপাত কমে যাবে।
গণমাধ্যম, ঝালকাঠি, দেশজুড়ে, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল, বরিশাল বিভাগ, ভোলা, মেইন লিড, লাইভ ভিডিও, শিরোনাম, সাব-লিড, স্বাস্থ্য