প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে বরিশালে আসা এক ভারতীয় তরুণের মৃত্যু হয়েছে। মৃত জাবেদ খান (২৯) ভারতের উত্তর প্রদেশের হাসানপুরের বাসিন্দা। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ওই তরুণের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হলেও ওই তাঁর মরদেহের ময়নাতদন্ত বুধবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল মর্গে সম্পন্ন করা হয়েছে। বুধবার ভোর ৪টার দিকে শেবাচিম হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্সেই মৃত্যু হয় ওই তরুণের। মর্গে অবস্থানকালে জাবেদের প্রেমিকা জানান, হঠাৎ করে বুকে ব্যথা দেখা দিলে ১০ অক্টোবর বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয় জাবেদকে। এরপর ভোরে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্সে ওঠানোর মুহূর্তে জাবেদের মৃত্যু হয়।
এদিকে জাবেদ অসুস্থ হয়ে পড়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার পরিবারকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে বলে জানান ওই তরুণী। তিনি বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে তিন বছর আগে তাদের পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। জাবেদ এর আগেও বরিশালে এসেছিলেন এবং সর্বশেষ আমার সঙ্গে দেখা করতে ৯ অক্টোবর বরিশালে আসেন, তবে তিনি আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় নাগরিক জাবেদ খান ভারত থেকে বাংলাদেশে আসেন এবং ৯ অক্টোবর লঞ্চযোগে বরিশালে আসেন এবং নগরের একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন। পরে জাবেদ তাঁর প্রেমিকাকে নিয়ে ঘোরাঘুরিও করেছিলেন। একপর্যায়ে তাঁর বুকে পেইন হচ্ছিল। তিনি সদর হাসপাতালে যায় সেখানে কিছু টেস্ট করিয়ে আবার হোটেলে যায়। তারপরের দিন আবার পেইন হলে তিনি অ্যাপোলোতে গিয়ে ডাক্তার দেখান, সেখানের ডাক্তার তার রিপোর্ট দেখে দ্রুত শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য বলেন। রাত দুইটার দিকে জাবেদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় তাকে ঢাকায় রেফার করতে বলা হয়। ঢাকায় নেওয়ার পথে ভোর রাত ৪টার দিকে তিনি মারা যায়। মৃত্যুর পর সুরতহাল রিপোর্টে হাতে পায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, জাবেদ অনেক সমস্যার রয়েছে। কিডনিতে সমস্যার পাশাপাশি তাঁর লিভারেও অনেক সমস্যা ছিল। ভারতেও তিনি চিকিৎসা নিয়েছিলেন, সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে কিছু কিছু জিনিস অর্থাৎ অ্যালকোহল জাতীয় জিনিস খেতে নিষেধ করেছিলেন। আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে এটা জানতে পেরেছি। আর ফাতেমা তুজ জোহরা খুশি নামের বরিশালের মেয়েটির সাথে জাবেদের অনেক দিন ধরেই সম্পর্ক ফেসবুকের মাধ্যমে। ২০১৮ সালের দিকে জাবেদ আরেকবার বাংলাদেশে এসেছিলেন।
মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়টি পুরো ভারতীয় দূতাবাসের জানিয়ে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, তাঁরা যেভাবে বলবে সেভাবেই মরদেহের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জাবেদের পরিবারের সাথে কথা বলেছি আমরা, আর তার প্রেমিকাও বার বার ওই পরিবারের সাথে কথা বলেছেন বলে জেনেছি। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। তারপরও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এদিকে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১০ অক্টোবর থেকে হাসপাতালের সিসিইউতেও ভর্তি ছিলেন জাবেদ। ময়নাতদন্তকারী কর্মকর্তা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. রেফায়েতুল হায়দার বলেন, মৃত ভারতীয় ব্যক্তির শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি, তবে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু লেখা ছিল। তিনি কিছু রোগে ভুগছিলেন। তিনি বলেন, মরদেহের ময়নাতদন্ত একটি বোর্ডের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছি। তাঁর ভিসেরা রিপোর্ট ও আগের শারীরীক সমস্যার প্রতিবেদন পেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করবো। অপরদিকে নগরের কাটপট্রি এলাকার হোটেল অ্যাথেনার অভ্যর্থনাকারী মো. সাব্বির জানান, ৯ অক্টোবর সকাল সাড়ে সাতটার দিকে জাবেদ নামে একজন ভারতীয় নাগরিক তাদের হোটেলে আসেন এবং ৪১০ নাম্বার রুম ভাড়া নেন। তবে তার সাথে বন্ধু পরিচয়ে একজন মেয়ে দেখা করতে আসেন এবং কিছু সময় রুমে থাকেন। পরের দিন ১০ তারিখ বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ রুমটি ছেড়ে দেন এবং রিসিপশনে জাভেদ তাঁর ব্যাগ রেখে যান, পরে নিয়ে যাবে বলেন। পুনরায় ১১ তারিখ ওই মেয়েটি এসে ব্যাগ নিয়ে যায়। আর বুধবার সকালে পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি লোকটি মারা গেছেন। পুলিশ আমাদের কাছ থেকে জাবেদের আসা-যাওয়া সব তথ্য নিয়ে গেছে। পুলিশের সঙ্গে তখন ওই মেয়েটিও ছিলেন। এদিকে পুলিশ জানিয়েছেন, মরদেহ আপাতত হিমঘরে রাখা হবে। পরিবারের সদস্যদের বরিশালে আসার কথা রয়েছে। তাঁরা এলে ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে কথা বলে মরদেহের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আন্তর্জাতিক, গণমাধ্যম, ঝালকাঠি, দেশজুড়ে, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল, বরিশাল বিভাগ, ভোলা, মেইন লিড, লাইভ ভিডিও, শিরোনাম, সাব-লিড, স্বাস্থ্য