বরিশালে করোনাকালে কাজ হারানো, আয় কমে যাওয়া পরিবারকে খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যসহায়তা দেওয়ার জন্য সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) চালু করা ‘মানবতার বাজার’ বন্ধ হয়ে গেছে। বাসদের নেতারা অভিযোগ করেছেন, অশুভ রাজনৈতিক চক্রান্তে তাঁরা গরিব মানুষের জন্য চালু করা এই বাজার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তবে অচিরেই বিকল্প ব্যবস্থায় এই বাজার চালু করার কথাও জানান তাঁরা।শনিবার বেলা ১১টায় বরিশাল নগরের ফকিরবাড়ি রোডে বাসদের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন বাসদ নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জেলা বাসদের আহ্বায়ক ইমরান হাবিব, সদস্যসচিব মনীষা চক্রবর্তী।মনীষা চক্রবর্তী বলেন, বাসদ বরিশাল জেলা শাখার উদ্যোগে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মানুষকে সম্মানের সঙ্গে খাদ্যসহায়তা দেওয়ার জন্য গত বছরের ১২ এপ্রিল মানবতার বাজার চালু করা হয়। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে গত বছর ১৫ হাজার পরিবারকে সাপ্তাহিক বাজার বিতরণ করা হয়েছিল। এর পাশাপাশি ফ্রি অক্সিজেন ব্যাংক, ফ্রি করোনা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, করোনা রোগীদের ফ্রি চিকিৎসা, মানবতার কৃষি, মানবতার পাঠশালাসহ নানা কর্মসূচি চালু আছে। মানবতার বাজার নামে এই বিনা মূল্যের বাজারের মডেলটি শুধু বরিশালে বা দেশে নয়, দেশের বাইরেও প্রচুর সুনাম কুড়িয়েছে।মনীষা চক্রবর্তী আরও বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর ৬ মে বরিশাল নগরের অমৃত লাল দে কলেজ মাঠে গত বছরের মতো মানবতার বাজার পরিচালনা শুরু করি। ২ দিনে এই মানবতার বাজার থেকে ৫ শতাধিক শ্রমজীবী ও দুস্থ মানুষের মধ্যে চাল, ডাল, তেল, আলু, চিনি, সেমাই, সবজিসহ ১০ ধরনের নিত্যপণ্য বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় দুই দিন পর শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই কলেজের কর্তৃপক্ষ কলেজ মাঠে মানবতার বাজার পরিচালনা করার বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করে এবং এটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে বলে।তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ সরাসরি না বললেও বিভিন্ন সূত্র থেকে আমরা জানতে পেরেছি, একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের চাপের মুখে কলেজ কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।’ তবে সংবাদ সম্মেলনে ওই দলের নাম বলেননি মনীষা।মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘এরপর আমরা নগরের আরও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করি এবং মানবতার বাজার পরিচালনা করতে জায়গা চেয়ে অনুরোধ করি। প্রথমে ওই সব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ খুশি হয়ে অনুমতি দিলেও পরবর্তী সময়ে তারাও রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করে এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানের জায়গা ব্যবহার করতে দেওয়ার ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করে।’মনীষা চক্রবর্তী আরও বলেন, ‘করোনাকালের শুরু থেকে বরিশালে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বর্তমানে একমাত্র বাসদই ধারাবাহিকভাবে ত্রাণ, চিকিৎসাসহ নানাভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এটা অনেকের কাছেই একটি অস্বস্তির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে আমরা মনে করি। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা মানে আমাদের কাছে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা। কিন্তু ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী মহল এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ভালো কাজ বন্ধ করার ষড়যন্ত্রে পরিণত করেছে।সংবাদ সম্মেলনে মনীষা বলেন, ‘গত বছরও আমাদের মানবতার বাজার উচ্ছেদের ঘৃণ্য অপচেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু জনগণের প্রতিরোধের মুখে সেই সময় সেই ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হতে পারেননি। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের এই লড়াইয়ে আমরা জনগণকে পাশে চাই। আর ষড়যন্ত্রকারী মহলের প্রতি আহ্বান, অন্যদের ভালো উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত না করে নিজেরা ত্রাণ বিতরণ করুন, আরও ভালো কিছু করার চেষ্টা করুন।