তিন বছরের করোনার চোখ রাঙানির পরে আসন্ন ঈদ উল ফিতরে রাজধানীসহ সারাদেশ থেকে দক্ষিণাঞ্চলমুখি ১০ লাখ মানুষের যাতায়ত নিশ্চিত করতে সড়ক ও আকাশ পথে সরকারীÑবেসরকারী সেক্টরের প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও নৌপথে বিশেষ সার্ভিস দূরের কথা নিয়মিত নৌযান চলাচলও অনিশ্চিত। অথচ গত বছর ঈদ উল ফিতরেও ঢাকাÑবরিশালÑঢাকা নৌপথে একটি কেবিনের টিকেটের জন্য সাধারন যাত্রীদের হন্যে হয়ে ঘুরতে দেখা গেছে। সরকারী স্টিমারের টিকেট ছিল সোনার হরিন। সেখানে গত ২৬ জুন পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার পরে নদ-নদীবহুল দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথ অনেকটাই পরিত্যক্ত হবার পথে। বিআইডব্লিইটিএ’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে যাত্রী পরিবহন সেক্টরে সরকারের আয় কমেছে প্রায় ৪০ ভাগ। রাষ্ট্রীয় নৌ-বানিজ্য প্রতিষ্ঠান-বিআইডিব্লিউটিসি রাজধানীর সাথে বরিশাল হয়ে দক্ষিনাঞ্চলের রকেট স্টিমার সার্ভিসের ৪টি প্যাডেল ও দুটি স্ক্র-হুইল জাহাজের সবগুলোই বন্ধ রেখেছে।
তবে শুধু পদ্মা সেতুর কারণেই নৌ ও আকাশ পথে যাত্রী সংখ্যা কমছেনা বলে দাবী করছে পর্যবেক্ষক মহল। তাদের মতে, অর্থনৈতিক মন্দার কারণেও এবার ঈদে ঘরমুখি মানুষের চলাচল কিছুটা সীমিত থাকছে। অনেকেই ঈদ উল ফিতরের দু মাস পরেই ঈদ উল আযহায় কুরবানী করার জন্য আপনজনের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করতে বেশী আগ্রহী হওয়ায় সব পরিবহনেই যাত্রী চাপ কিছুটা কম থাকবে বলে মনে করছেন।এমনকি গত বছর পদ্মা সেতু চালু করার পরে ঈদ উল আযহার সময়ও নৌপথে যে যাত্রী সমাগম হয়েছিল, এবার তাও অনুপস্থিত। ফলে শুধু ঢাকাÑবরিশালÑঢাকা নৌপথে প্রায় ৩০টি নৌযানের রুট পারমিট থাকলেও গত প্রায় ৮ মাস ধরে নৌযান মালিক সমিতির রোটেশন পদ্ধতিতে উভয় প্রান্ত থেকে দৈনিক গড়ে দুটির বেশী নৌযান চলছে না। এমনকি এবার ঈদের আগে-পরেও কোন বিশেষ সার্ভিস দূরের কথা নিয়মিত যে ৯টি করে নৌযান চলার কথা তা নিয়েও সন্দিহান রয়েছেন মালিকরা। রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৪০টি রুটে দেড় শতাধিক বিলাসবহুল নৌযানের দুই-তৃতীয়াংশই এখনো বন্ধ।তবে এরপরেও গার্মেন্টস কর্মীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও শ্রমজীবী মানুষ ঈদ করতে ঘরে ফিরবেন বলে আশা করে ১৭ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সড়ক ও আকাশ পথের মত নৌপথেও যাত্রীর চাপ বাড়বে বলে আশাবাদী নৌযান মালিকরা। কিন্তু এজন্য কোন বিশেষ সার্ভিসের প্রয়োজন হবে না মনে করছেন না তারা। রুট পারমিটধারী নৌযানগুলো নিয়মিত সার্ভিসে থেকেই স্বভাবিকভাবে যাত্রী বহন করতে পারবে বলে মনে করছেন নৌযান মালিকরা। সেভাবেই সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নৌযান মালিক।
এদিকে সড়ক পথে পদ্মা সেতু চালু হবার পরে বিপুল সংখ্যক নামি-দামী বেসরকারী পরিবহন সংস্থা রাজধানীর সাথে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে আরামদায়ক ও বিলাসবহুল যাত্রী পরিসেবা চালু করেছে । এসব বাস কোম্পানীগুলো ভাড়া নিয়ে চরম নৈরাজ্য করলেও তা দেখার কেউ নেই। তবে বাড়তি ভাড়ায়ও এসব বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি প্রায় শেষের পথে। বেসরকারী সড়ক পরিবহন সংস্থাগুলো ১৭-৩০ এপিল পর্যন্ত বাড়তি যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্যে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেই কাজ করছেন। তবে রাষ্ট্রীয় বিআরটিসি এবারো যথারীতি কোন রুটে বাড়তি সার্ভিস দিচ্ছে না। আকাশ পথেও বেসরকারী নভো এয়ার ও ইউএস বাংলা নিয়মিত ফ্লাইট চালু রাখছে। রাষ্ট্রীয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকা-বরিশাল-ঢাকা আকাশ পথে তার সপ্তাহে ৩ দিনের ফ্লাইটকে ১৭ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন পরিচালনা করবে বলে জানিয়েছে। এমনকি ২০ এপ্রিল সকাল-বিকেল দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান। তবে ঈদকে সানে রেখে সরকারী এ আকাশ পরিবহন সংস্থাটিও যাত্রী ভাড়া ৩ হাজারের স্থলে ৪ হাজার ৮শ টাকায় উন্নীত করেছে বলে জানা গেছে। ঈদ পরবর্তী পুরো সপ্তাহজুড়ে বরিশাল থেকে ঢাকামুখি যাত্রীর ব্যাপক চাপ থাকলেও জাতীয় পতাকাবাহী বিমান ২৪ এপ্রিলের পরে নিয়মিত কোন ফ্লাইট রাখছে না। যাত্রীদের তরফ থেকে ঈদের পরে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বরিশাল সেক্টরে বিমানের নিয়মিত ফ্লাইট প্রদানের পাশাপাশি এ রুটে সর্বনি¤œ ভাড়া আগের মতই ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করার দাবী জানিয়েছেন।
গণমাধ্যম, ঝালকাঠি, দেশজুড়ে, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল, বরিশাল বিভাগ, ভোলা, মেইন লিড, শিরোনাম, সাব-লিড