বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১০ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে জনের ৬ জনকে বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। ১৮ মে বৃহস্পতিবার সকালে বরিশালের আঞ্চলিক কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ন কবির বৈধ ও মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।
গতকাল সকালে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়ন পত্র যাচাই বাছাই শুরু হয়। মেয়র পদপ্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে মেয়র পদে চারজনের মনোনয়ন বাতিল হয়। স্বাক্ষর ও ভোটার তালিকার কোটা পূরণ না থাকায় এই চারজনের প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। বৈধ প্রার্থীরা হলেন : আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ, জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম, জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু, স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান ও আলী হোসেন।
বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন : লুৎফুল কবির, সৈয়দ এসাহাক মোহাম্মদ আবুল খায়ের, মো. আসাদুজ্জামান ও নেছারউদ্দিন। প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র জমা না দেয়ায় তাদের মনোনয়ন পত্র বাতিল করা হয়েছে। বৈধ প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারণা করবেন। যদিও ইতিপূর্বেই বরিশালে অনানুষ্ঠানিক শোডাউন, শুভেচ্ছা বিনিময়ে, সভা সিম্পোজিয়াম ও পরিচিতি সভা শুরু করে আলোচিত হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের খোকন সেরনিয়াবাত, জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস, ইসলামি আন্দোলনের মুফতি ফয়জুল করীমসহ অনেকেই। আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে মুফতি ফয়জুল করীমকে কারণ দর্শানোর পর তিনি লিখিতভাবে এর জবাব দিয়েছেন। এছাড়া আচরণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগে ৬ কাউন্সিলরকে জরিমানা করা হয়েছে।
মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে বরিশালে আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত। তার শ্লোগান ‘নতুন বরিশাল, জয় হাসিনা। তার পুরো নাম আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত এবং মায়ের নাম মরহুমা আমেনা বেগম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের ছোট ছেলে এবং বরিশালে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পুরোধা খ্যাত বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র ছোট ভাই আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন খুলনায় বসবাস করেছেন তিনি। চলতি বছর ১৫ আগস্টের স্মরণ নিয়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া এক সাক্ষাৎকারের পরপরই হঠাৎ আলোচনায় উঠে আসেন খোকন সেরনিয়াবাত। এর আগে বরিশালে তিনি শ্বশুরের বাসা নগরীর ব্রাউন কম্পাউন্ডে এসে থাকতেন। ঢাকায় বসবাস করেন ধানম-িতে।
বরিশালের নেতারা জানান, পঁচাত্তরের নির্মম হত্যাকা-ের পর থেকে নিভৃতচারী পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী খোকন সেরনিয়াবাতের দলে কোনো পদ-পদবি ছিলোনা। তবে আজন্ম তিনি দলের জন্য বিভিন্ন সেবামূলক কাজে অংশ নিতেন। সাবেক সংসদ সদস্য ও সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর পরে বরিশালে তাঁর স্মরণ ছিলো গোপনে ও নিভৃতে। চলতি বছরই প্রথম মহানগর আওয়ামী লীগের মাধ্যমে শোকসভা ও দোয়া-মোনাজাতের আয়োজন করে তিনি নিজেও অংশ নেন তাতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বরিশালে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মনোনীত করেছেন। যা নিয়ে খুশী বরিশালবাসী। তার নির্বাচনী প্রচারণার অন্যতম আকর্ষণ স্ত্রী লুনা আব্দুল্লাহ। নেতাকর্মীদের কাছে তিনিই এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। তিনি নগরীর বাসীন্দারের কাছে লুনা ভাবী হিসেবে আপনজন হয়ে উঠেছেন।
অন্যদিকে হিরণের বরিশাল, তাপসের অঙ্গীকার/ লাঙলের অঙ্গীকার শ্লোগান নিয়ে বরিশাল ফরএভার লিভিং সোসাইটির সেবামূলক কার্যক্রমে নগরীর ৩০ ওয়ার্ডে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস। তিনি ৬ আগস্ট ১৯৬৫ সালের বরিশালের বাবুগঞ্জের চাঁদপাশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা প্রয়াত সফিজউদ্দিন হাওলাদার ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। তাপস গত নির্বাচনেও বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী হিসেবে আলোচিত ছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি জাপানের বিখ্যাত ইয়োকোহামা কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
বহুগুণের অধিকারী বাবুগঞ্জ উপজেলার কৃতি সন্তান প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস নিজ এলাকা চাঁদপাশা ইউনিয়নে দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং একটি হাইস্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বরিশালের জাগুয়া ইউনিয়নে সাউথ অ্যাপোলো মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল নামে বরিশাল বিভাগের সর্বপ্রথম বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে সেখানে তিনি কম খরচে এমবিবিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ এবং বিনামূল্যে ও স্বল্পমূল্যে দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা রেখেছেন। বাবুগঞ্জ এবং বরিশালের মানুষের কাছে প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস পরিচ্ছন্ন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তাপসের নির্বাচনী প্রচারণায় তার সহধর্মিণী ইসমত আরা ইকবালও ইতিমধ্যেই সুপরিচিত হয়ে উঠেছেন।
সততা শান্তির নিশ্চয়তা নিন হাতপাখায় ভোট দিন- শ্লোগানে বরিশালে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ এর মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম প্রচারণা চালাচ্ছেন। বরিশালের চরমোনাই ইউনিয়নের চরমোনাই গ্রামে তার জন্ম ১০ জানুয়ারি ১৯৭৩। তার পিতা মরহুম সৈয়দ ফজলুল করিম (রহঃ) বাংলাদেশের প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ ও চরমোনাই পীর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ফয়জুল করীম নিজেও একজন ইসলামি প-িত, রাজনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ। সমর্থকদের নিকট তিনি শায়েখে চরমোনাই নামে পরিচিত। বর্তমানে তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি ও বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ডের সহ-সভাপতি এবং বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য। ছাত্রজীবনে তিনি ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
অপর প্রার্থী কামরুল হাসান রুপন ইতিমধ্যেই আলোচনায় চলে এসেছেন। তিনি প্রয়াত মেয়র আহসান হাবিব কামালের একমাত্র ছেলে। কামরুল হাসান রুপন ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেছেন। ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্রদল হাসান মামুন ও সাইফুল ইসলাম ফিরোজ কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়া ২০১০ সালে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি দুই কন্যার জনক। তার পিতা আহসান হাবিব কামালের মতো জনসেবা করে তিনি জীবন কাটাতে চান। মেয়র পদে তিনি লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে। এছাড়াও রয়েছেন জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আলী হোসেন।
গণমাধ্যম, ঝালকাঠি, দেশজুড়ে, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল, বরিশাল বিভাগ, বিনোদন, ভোলা, মেইন লিড, রাজনীতি, লাইভ ভিডিও, শিরোনাম, সাব-লিড