নতুন বছর নতুন দিন, নতুন বইয়ে হোক রঙিন’- এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে বরিশালে উদযাপিত হয় ‘বই উৎসব ২০২৪’। গত ১৩ বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও ইংরেজি বছরের প্রথম দিনেই জেলার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়। সোমবার সকালে বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শওকত আলী বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বরিশাল জিলা স্কুল এবং মুকুল স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং অমৃত লাল দে কিন্ডারগার্টেনে প্রধান অতিথি হিসেবে এ বই উৎসবের উদ্বোধন করেন। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শওকত আলী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, শুধু বই পেলেই হবে না বরং সেই সাথে নিয়মিত পড়াশোনাও করতে হবে। তিনি প্রাথমিক শিক্ষাকে সকল শিক্ষার ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করে ছাত্র/ছাত্রীদেরকে প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি মজবুত করার তাগিদ দেন। পাশাপাশি বাসায় সন্তানদের নিয়মিত পড়াশোনা নিশ্চিত করতে এবং স্মার্টফোন আসক্তি থেকে তাদেরকে দূরে রাখতে অভিভাবকদের প্রতি পরামর্শ দেন। এসময়ে তিনি নিয়মিত পাঠ্যক্রমের বাইরে সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমেও অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে উৎসাহ প্রদান করেন। নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আয়োজিত বই উৎসবে অতিথিদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ ইউনুস আলী সিদ্দিকী, জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বরিশাল অঞ্চলের উপপরিচালক মোঃ আনোয়ার হোসেন, জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসাইন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ মোঃ আকতারুজ্জামানসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা এবং বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকরা। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক শিক্ষা বরিশাল বিভাগ এর উপপরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন ও পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলেন এস.এম.সি মুকুল স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি শ্রী ভানু লাল দে। বক্তারা দেশে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ভর্তির হার বৃদ্ধি, ঝরে পড়ার হার হ্রাসকরণ, নারী শিক্ষার অগ্রগতিসহ সার্বিক শিক্ষা খাতে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জনের পেছনে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। এছাড়াও কোচিং, গাইড বই কিংবা শর্টকাট সাজেশনের পথে না হেঁটে পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি অধ্যায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সেই সাথে ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বছরের প্রথম দিন থেকেই নিয়মমাফিক পড়াশোনা করা, প্রতিটি ক্লাসে উপস্থিত থাকা ও ক্লাসের পড়া ক্লাসেই শেষ করার চেষ্টা করা, পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের প্রতিভাগুলো বিকশিত করা এবং মোবাইল আসক্তি থেকে দূরে থাকার উপদেশ প্রদান করা হয়। এসময়ে শিক্ষকদের প্রতিও স্কুলে পাঠদানে আন্তরিক থাকার তাগিদ দেওয়া হয়।
সরকারি হিসাব অনুসারে বরিশাল বিভাগে ৬ হাজার ২৪৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রাথমিক স্তরে বরিশাল বিভাগে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১ লাখ ৬২ হাজার ৫৭২ জন। বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৫০ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮২ টি বই। যার শতভাগ বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হবে। প্রাথমিক স্তরে বরিশাল জেলার মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ লাখ ২ হাজার ১৩৭ জন। বইয়ের চাহিদা রয়েছে ১৩ লাখ ৪ হাজার ৯৭৭ টি বই। যার শতভাগ বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হবে । বরিশাল জেলায় সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১ হাজার ৫৯৪ টি। প্রাক প্রাথমিকে ২ টি বই, ১ম ও ২য় শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের ৩ টি করে বই এবং ৩য় থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ৬ টি করে বই দেয়া হয়। উচ্চ মাধ্যমিক, দাখিল, কারিগরি সহ বরিশাল জেলায় মাধ্যমিক স্তরে মোট শিক্ষার্থী ৪ লাখ ৪২ হাজার ৫০১ জন। বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৩৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৯৬ টি। পাওয়া গেছে ২৬ লাখ ৭৮ হাজার ৪৪২ টি। বিতরন করা হয় ২৫ লাখ ১৩ হাজার ৯৭২ টি। প্রাপ্তির হার ৭০ দশমিক ৬৯ শতাংশ। বরিশাল উপজেলা ২০৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ উৎসব হয়েছে।
গণমাধ্যম, দেশজুড়ে, বরিশাল, বরিশাল বিভাগ, মেইন লিড, শিক্ষা, শিরোনাম, সাব-লিড